My Poems

 

PLEASE VISIT MY WEBSITE FOR VARIETY OF POEMS 

sanatkumarbanerjee.wixsite.com/my-poems

 

লিমেরিক – ৩৬

লিমেরিক ছোট কবিতা – পাঁচ লাইনের ছড়া। গভীর ভাব নেই, তত্ত্ব নেই, উপদেশ নেই, কবিকল্পনা নেই, অলঙ্কারের ঝনৎকার নেই, অনেক আধুনিক কবিতার মতন না-বোঝার কাব্যরস নেই – এমনকি তেমন ভাবে দেখতে গেলে কোনও মানেও নেই। অথচ ছন্দ আছে, মিল আছে, নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে আর তার সাথে আছে এক ছেলেমানুষিমজা। সাধারণত লিমেরিক পাঁচ লাইনের ছড়া – মিলের বিন্যাস ক ক খ খ ক – তৃতীয় ও চতুর্থ লাইন অন্য লাইনগুলোর থেকে ছোট। এই লিমেরিক কি ভাবে লেখে তাই নিয়ে আমার লিমেরিক – 
পাঁচ লাইনের ছড়া নাম লিমেরিক
এক-দুই-পাঁচে মিল হতে হবে ঠিক
তিন চার ছোট লাইন
মিল হবে লেখে আইন
ছড়া বলে হেসোনাকো করে ফিক ফিক।    
আয়ারল্যান্ডের লিমেরিক নামের একটি শহরের নামানুসারে এর নাম। আঠার শতকে A Book of Nonsense – এর রচয়িতা এডোয়ার্ড লিয়র এই লিমেরিক জনপ্রিয় করে তোলেন। লিয়রের বেশ কিছু লিমেরিক সত্যজিৎ রায় বাংলা লিমেরিকে অনুবাদ করেছেন। সত্যজিৎ রায়ের নিজস্ব লেখা একটি লিমেরিক তুলনাহীন –
 
বুঝে দেখ জটায়ুর কলমের জোর,
ঘুরে গেছে রহস্য কাহিনীর মোড়।
থোর বড়ি খাড়া
লিখে তাড়া তাড়া,
এইবারে লিখেছেন খাড়া বড়ি থোর।
 
ইংরেজিতে দুটি লিমেরিকের আমার খুব প্রিয় –
 
১)  এই লিমেরিকটির রচয়িতা ব্রিটিশ-কানাডিয়ান ছত্রাক বিজ্ঞানী (Mycologist) Arthur Reginald Buller FRSC, FRS
 
There was a young lady named Bright,
Whose speed was far faster than light;
She started one day
In a relative way,
And returned on the previous night.
 
বিখ্যাত পদার্থবিদ জর্জ গ্যামোর লেখা One Two Three… Infinity বইটিতে এই লিমেরিকটি একটু অন্যভাবে আছে –
 
There was a young  girl named Miss Bright,
Whose could travel much faster than light;
She departed one day
In an Einsteinian way,
And came back on the previous night.
 
২) দ্বিতীয় লিমেরিকটির রচনাকার Leigh Mercer – যাঁর বিশেষত্ব ছিল অঙ্ক ও ইংরেজি শব্দ নিয়ে মজার মজার খেলা ও ধাঁধা সৃষ্টিতে –
এই সমীকরণটি Leigh Mercer লিমেরিকে লেখেন –
 
dozen, a gross, and a score
Plus three times the square root of four
Divided by seven
Plus five times eleven
Is nine squared and not a bit more.
 
আমার মাথায় হঠাৎ কিছুদিন লিমেরিক লেখার ভূত চাপল – আর তারই ফলশ্রুতি…………….

 

 

লিমেরিক

 

(১)
বেলগাছেতে বেহ্মঠাকুর নিমের দাঁতন কানে
পেঁপের ডালে কল্কে সেঁটে গয়ার তামাক টানে।
মাথায় টিকি খড়ম পায়ে
পৈতে গলায় উদোম গায়ে
আড়চোখেতে তাকিয়ে দেখে পেত্নিপিসীর পানে।
 
(২)
খাবার পরে রাতের বেলা যেই গিয়েছি শুতে
খিমচি দিয়ে চিমটি কেটে জ্বালায় কেন ভুতে?
যেই  জ্বেলেছি শলাই কাঠি
ভুত বাবাজির দাঁতকপাটি
কানটি ধরে রেখে এলাম আলিপুরের zooতে।
 
(৩)
সাঝবেলাতে পেত্নীপিসী শ্যাওড়াতলায় এসে
ঘোমটা টেনে বললে আমায় মিচকি হাসি হেসে
ওরে আমার মামদো ছেলে
শুটকো মুখো নোংরা কেলে
বালতি ভরা গোবর নে আয় লঙ্কাপোড়া ঠেসে।
 
(৪)
নিঝুম রাতে বাঁশ বনেতে চারদিকেতে কালো
এরই মাঝে হেথায় হোথায় জ্বলছে কিসের আলো
এদিক সেদিক কে বা কারা
হাতছানি দেয়, দেয় ইশারা
এমন রাতে পীরিত করা ভুতের সাথেই ভালো। 
 
(৫) 
তালপুকুরের ঈশান কোনে শ্যাওড়া গাছের শাখে
শাঁকচুন্নি বসে মুখে গাবের মলম মাখে।
সন্ধ্যে হোলেই গাছের তলায়
ঘেঁটু ফুলের মালা গলায়, 
দাঁড়িয়ে থাকে ঘোমটা টেনে কলসি নিয়ে কাঁখে।
 
(৬)
পান্তা  খেতে পান্তা বুড়ি  গিয়েছে তালতলা
পুরুত মশাই গামছা বেঁধে এনেছে চালকলা
কোঁচড় ভরা মুড়কি নিয়ে
গোঁসাই বাড়ির মায়ে ঝিয়ে
সকাল থেকে তবলা নিয়ে চলছে সাধা গলা।
 
(৭)
নতুন গুড়ের  পায়েস রাঁধে ক্ষ্যান্ত বুড়ির পিসি
আঁচল খুলে কৌটো থেকে দিচ্ছে দাঁতে মিশি।  
উঠোন পরে ধামা কুলো
তাতে শুকোয় শিমুল তুলো
মাঝে মাঝেই নাকে শোঁকে ক্যারাচিনির শিশি।
 
(৮)
সোমবারেতে বিন্তি খুড়ির কুমড়ো খেতে  মানা
কচুর শাকের ঘণ্ট রেঁধে খাচ্ছে ছোলার দানা।
ডালের সাথে বেগনি  ভেজে
মশলা দিয়ে পানটি  সেজে
উপোস করে সন্ধ্যে বেলায় খাবে বেলের পানা।
 
(৯)
ভাদ্দ মাসে পয়লা তারিখ বিষ্টুদাদুর মাসী
উধাও যখন হোল বয়স আটের ওপর আশি।
কেষ্ট খুড়ো দেশে দেশে
খুঁজে পেল হঠাৎ শেষে
ফেসবুকেতে ছবি সেঁটে ঠাম্মা আছেন কাশী।
 
(১০)
মধ্যরাতে ঘুমের ঘোরে শিরোমণি খুড়ো
হঠাৎ করে চেঁচিয়ে ওঠে খাব মাছের মুড়ো
গিন্নি তেনার স্বাস্থ্যবতী
রাঁধবে শুধুই কচুর লতি
কস্তাপেড়ে কাপড় পরা মাথায় খোঁপার চুড়ো।
 
(১১) 
গলির মোড়ে তিনতলাতে কান্তবাবু থাকে
দোরজানালা বন্ধ করে নস্যি নিয়ে নাকে
হাঁচতে থাকেন বেদম জোড়ে
তিনটি ঝাড়া প্রহর ধরে
ত্রিসীমানায় বাড়ির তাহার বসে না চিল কাকে।
 
(১২)
পাঠান মুলুক লালামুসায় পান্ত গোঁসাই থাকে
কানের পিঠে চুরুট গুঁজে নস্যি নিয়ে নাকে
হিঞ্চে শাক আর পলতা পাতা
থানকুনি আর ব্যাঙের ছাতা
অনলাইনে ব্যাবসা করেন চালান দিয়ে ডাকে।
 
(১৩)
মোগলসরাই ইষ্টিশনে যেমনি গাড়ী থামে
সামলে ধুতি লম্ফ দিয়ে বঙ্কুমামা নামে।
সামনে দেখে ইডলি ধোসা
দেখতে না পায় কলার খোসা
এর পরেতে কি যে হোল ভেবেই কপাল ঘামে।
 
(১৪)
নৌকা করে কত্তা গ্যালেন খুলনা থেকে পাবনা 
বস্তা ভরে কিনতে হবে জার্সী গরুর জাবনা।
দিশি জিনিষ বিলাতি নাম
দোকানি চায় ডলারে দাম
দশটা টাকা ঠেকিয়ে বলেন একেই ডলার ভাব না।
 [কিশোর ভারতী – অগাস্ট ২০১৭ তে প্রকাশিত]
(১৫)
সজনেখালির হোগলা বনে ব্যাঘ্রমশাই থাকে
পুন্নিমাতে জলার ধারে হালুম করে ডাকে।
তাই না শুনে গোঁসাই খুড়ো
সাবাস বেটা – বললে বুড়ো
টিভির থেকে দুহাত দূরে হাত বুলিয়ে টাকে।
[‘অন্যনিষাদ’ (ওয়েব ম্যাগাজিন – ৬ষ্ঠ বর্ষ ৮১ তম সংখ্যা ২২শে অগাস্ট ২০১৭য় প্রকাশিত]
http://anyanishad.blogspot.in/2017/08/blog-post_62.html
 
(১৬)
নিভিয়ে আলো পাড়ার সবাই যেমন ধারা শুলো
তারস্বরে ডাকতে থাকে পাড়ার কেলো ভুলো ।
সদ্য কাঁচা ঘুমের দফা
রাতের মতন এবার রফা
কলম দিয়ে ঠাসতে থাকি কানের ভেতর তুলো।
[‘অন্যনিষাদ’ (ওয়েব ম্যাগাজিন – ৬ষ্ঠ বর্ষ ৮১ তম সংখ্যা ২২শে অগাস্ট ২০১৭য় প্রকাশিত]
http://anyanishad.blogspot.in/2017/08/blog-post_62.html
 
 
(১৭)
ঘুটঘুটি রাত চারদিকেতে অমানিশির আঁধার
দরকার কি এমন রাতে হুলোর গলা সাধার।
ভয়ের চোটে হাত পা ছুঁড়ে
চেঁচিয়ে উঠে বিকট সুরে
পটাং করে ছিঁড়ল দড়ি রামবালকের গাধার। 
 
(১৮)
সোদর বনের দক্ষিণরায় কাবু  হাঁটুর ব্যাথায়
স্কচ হুইস্কি মালিশ করে কবিরাজের কথায়
মাঝের থেকে নেশার ঘোরে
রাত ফুরুলে  প্রথম ভোরে
লম্ফ দিয়ে চড়ল গিয়ে হাওড়া ব্রিজের মাথায়।
 
(১৯)
গাধার ডাকে চমক খেয়ে জুড়লো হুলো গান  
কুকুরগুলো চেঁচিয়ে ওঠে বধির হোল কান।
বোঝার ওপর শাকের আঁটি
লাগল দাঁতে দাঁতকপাটি
ওস্তাদজী ধরেন এবার কালোয়াতি তান।
 
(২০)
কে বা কারা বলেছিল কাটোয়া না কালনা
ছিদু ময়রা বেচে নাকি জিলিপিরই  ডালনা।
রুটি লুচি তন্দুরি
অথবা ভাতের ঝুড়ি
চোখ বুজে খেয়ে যাও একটুও ঝাল না । 
 
(২১)
চায়নার চাউমিন ইতালির পাস্তা
তাই দিয়ে শেষ করে সকালের নাস্তা। 
দুপুরেতে খেয়ে ভাত
বিছানাতে কুপোকাৎ
রাতে খায় ছাতু দেওয়া কচুরিটা খাস্তা।
 
(২২)
সকাল বেলায় গিয়ে দেখি টেরিটি বাজারে
খাবার দোকান – নাম দিয়েছে “আজা রে খা যারে”। 
ইডলি ধোসার বদলে নাস্তা
চিলি চিকেন মশলা পাস্তা
গ্যারান্টি দেয় নড়বে পাতে চিংড়ি এমন তাজা রে।
 
(২৩)
ঢের হয়েছে কাব্য, এবার তত্ত্বকথা শোন
ছলনাতে ভুলে আশা কোর না কক্ষোন। 
মানুষ মরে আশার ছলে –  
এমন কথা শাস্ত্রে বলে,
মিটলে আশা ভাল –  নচেৎ ললাটলিখন গোন।
 
(২৪)
হাল্কা রোদে টুনটুনিটা পাতার ফাঁকে ফাঁকে
আলোছায়ায় নেচে নেচে টুইট টুইট ডাকে।
টিকির দেখা যায় কি না যায়
সরু ঠ্যাঙে কেবল লাফায়
ফুড়ুৎ করে পালিয়ে গেল দেখেই বিড়ালটাকে।
 
 (২৫)
মুখপোড়া এক বসল এসে ডিনার টেবিল পরে
প্রেশার কুকার খুলে যা পায় সবই সাবাড় করে। 
কর্তা কেবল ছবি তোলে
ফেসবুকেতে দেবে বলে,
গিন্নি শুনেই খিল দিয়েছে নীচে শোবার ঘরে।
 
(২৬)
মাঝরাতেতে দুই হুলোতে বেদম মারামারি
কদিন ধরেই করছে তারা বড্ড বাড়াবাড়ি।
কানে গুঁজে কাপাস তুলো
চাপিয়ে পিঠে ভাঙা কুলো
পাগলা বুড়ো পোটলা বেঁধে চলল পাড়া ছাড়ি।
 
(২৭)
গরমে বাতানুকূল শীতকালে কম্বল
প্রথমে সুক্তো আর শেষপাতে  অম্বল
শিশুকালে হামাগুড়ি
বয়স হোলে বুড়োবুড়ি
এককালে ঠেকে এসে হরিনামই সম্বল।  
 
(২৮)
শুনতে পেলাম পাটনা গিয়ে
সর্ষে বেটে বাটনা দিয়ে
লঙ্কা কাঁচা দিয়ে তাতে
সুতোয় বেঁধে কলার পাতে
ইলিশ খাবে গরম ভাতে, কোন রকম চাট না নিয়ে।
 
(২৯)
এই তো সেদিন দিনদুপুরে শ্যামবাজারের মোড়ে
কে বা কারা পেছন থেকে কলার চেপে ধরে
বললে এবার পূজোর দিনে
গাইতে হবে পয়সা বিনে
ফিরতে হবে রাত বিরেতে দুই পা গাড়ী করে।   
 
(৩০)
সাতসকালে মাস্ট্রামশাই নাদনঘাটে গিয়ে
মাছ কিনেছেন ডজন কিলো সাতটা কড়ি দিয়ে।
খোলসে পুঁটি পারশে বাটা
ইলিশ পেটি কাতলা কাটা
আজ দুপুরে ভোজের মেলা মাছের ছবি দিয়ে।
 
 (৩১)
 চশমা পরা চশমা পাখী আমের ডালে বসে
স্লেট পেন্সিল নিয়ে আবার কিসের হিসেব কষে?
পোকায় খেল দশটা টাকা
এদিক ডানার পকেট ফাঁকা
গিন্নি তেনার মাথায় আবার ডাভের সাবান ঘষে।
 
(৩২)
সকালবেলায় নরম রোদে প্রজাপতির মেলা
কাঠবেড়ালি দৌড়ে বেড়ায় সারা সকালবেলা।
আমের ডালে পাতার ফাঁকে
লেজ নাচিয়ে দোয়েল ডাকে
সবুজঘাসে মায়ের সাথে বিড়ালছানার খেলা।
 
(৩৩)
গাংপুরেতে পুকুর ধারে গাংশালিকের ঘর
মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে ইঞ্জিনিয়ার বর।
দিতে হবে পণের টাকা
এদিকে যে পকেট ফাঁকা
ঘর বেচবে স্কোয়ার ফুটে হাজার টাকা দর।
 
(৩৪)
আটচালার ঐ চালের মাথায় চালকুমড়ো ফলে
চালতাতলায় ছাতারেরা জুটছে দলে দলে।
দীঘির জলে শালুক ফোটে
ভ্রমর ফুলে ফুলে ছোটে
কাদায় ভরা গাঁয়ের পথে গরুর গাড়ী চলে।
 
(৩৫)
পুজোর তত্ত্ব নিয়ে পিঁপড়ে চলল শ্বশুর বাড়ি
শাশুড়িমার তরে আছে জড়ির ঢাকাই শাড়ি।
শ্বশুর কাবু বাতের ব্যাথায়
উলটে পড়েন কথায় কথায়
তেনার জন্য নিয়েছে এক টাটার টোটো গাড়ী।
 
(৩৬)
আকাশেতে উড়ে চলে হাঁসেদের দল
তাই দেখে চখা বলে ‘চল চখী চল।
ঘুরে ঘুরে দেশে দেশে
নলবনে ফিরে এসে
আর বারে গড়ে দেব ঝুমঝুমি মল।   

 

 

5 thoughts on “My Poems

Leave a comment